প্রকাশিত: ২৭/০২/২০২১ ৮:০১ পিএম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্দামান সাগর থেকে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ভাসতে থাকা নৌকা থেকে যে ৮১ রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীকে উদ্ধার করেছে; বাংলাদেশ তাদের ফেরত নিতে বাধ্য নয় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ব্রিটিশ বাতাংসংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেছেন তিনি।

এর আগে, শুক্রবার ভারতীয় কর্মকর্তারা জানান, আন্দামান সাগরে একটি মাছ ধরার নৌকা থেকে ওই রোহিঙ্গাদের জীবিত উদ্ধার করেছে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী। একই নৌকায় আরও ৮ জনের মরদেহ পাওয়া যায়। উদ্ধার এই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করছে ভারত।

ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, মানবিক সংকট বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের উদ্ধারের পর খাবার এবং পানি সরবরাহ করা হলেও ভারতে তাদের আশ্রয় দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই। এই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত সরকার আলোচনা করছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছে, নিকটতম দেশ ভারত অথবা রোহিঙ্গাদের দেশ বা উৎস মিয়ানমার তাদের গ্রহণ করবে।

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বাংলাদেশের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী রয়টার্সকে বলেন, তারা বাংলেদেশি নাগরিক নন। মূলত তারা মিয়ানমারের নাগরিক। বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চল থেকে এক হাজার ৭০০ কিলোমিটার দূরে তাদের পাওয়া গেছে। এমন অবস্থায় তাদের গ্রহণে আমাদের কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।

তিনি বলেছেন, ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে ১৪৭ এবং মিয়ানমার থেকে ৩২৪ কিলোমিটার দূরে রোহিঙ্গারা অবস্থান করছিলেন। রয়টার্সকে টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অন্যান্য দেশ এবং সংস্থাকে শরণার্থীদের যত্ন নেওয়া উচিত।

তবে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। শরণার্থীদের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে ১৯৫১ সালে জাতিসংঘ একটি কনভেনশন গ্রহণ করে। নয়াদিল্লি এই কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি।

শরণার্থীদের সুরক্ষায় ভারতের কোনও আইন নেই। তারপরও দেশটিতে বর্তমানে দুই লাখের বেশি শরণার্থী বসবাস করছেন; তাদের মধ্যে কিছু রোহিঙ্গাও রয়েছেন।

কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে বর্তমানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছেন; যারা বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে বিভিন্ন সময়ের সংঘাত-সহিংসতা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমারের সামরিকবাহিনীর প্রাণঘাতী অভিযানের মুখে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসেন।

পাচারকারীরা প্রায়ই উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গাদের অর্থের বিনিময়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া অথবা ইন্দোনেশিয়ায় পাঠানোর চেষ্টা করে। রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাটি সাগরে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর গত সপ্তাহে উদ্বেগ জানিয়েছিল জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।

শরণার্থীদের সহায়তায় বৈশ্বিক কোনও চুক্তি নেই

মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর আশায় গত ১১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে যাত্রা শুরুর পর রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাটি আন্দামান সাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভাসতে ছিল। শুক্রবার ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধারের পর নারী-শিশুদের নতুন কাপড় এবং খাবার ও ওষুধ দেয়ার তথ্য জানায়।

বর্তমানে ভারতের ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন তারা। তাদেরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ভারতীয় কর্মকর্তারা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাটি গত ১১ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। নৌকাটিতে ৫৬ জন নারী, ৮ কিশোরী, ২১ জন পুরুষ এবং পাঁচ কিশোর ছিল। বর্তমানে তাদের অনেকেই অসুস্থ।

ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গাদের অনেকেই চরম পানি শূন্যতায় ভুগছেন এবং নৌকাটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ার পর চারদিন দিকহারা হয়ে সাগরে ভাসতে থাকায় তাদের খাবার ও পানি ফুরিয়ে যায়।

সব রোহিঙ্গা অথবা নৌকাটির লোকজনের দায়িত্ব নেওয়ার এবং পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে বৈশ্বিক কোনও চুক্তি হয়েছে কিনা; রয়টার্সের এমন প্রশ্নের জবাবে এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, না, মোটেও না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআরের অফিস থেকে সরবরাহকৃত আইডি কার্ড প্রায় ৪৭ জন রোহিঙ্গার কাছে আছে। যেখানে এই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে উল্লেখ আছে। তাদের দায়-দায়িত্ব জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক এই সংস্থার গ্রহণ করা উচিত।

তবে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ইউএনএইচসিআরের কোনও কর্মকর্তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে আসিয়ান

রাখাইন রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় মিয়ানমারের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। পাশাপাশি ...

ফিলিস্তিনপন্থি গ্রুপকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন টিউলিপ

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রো-প্যালেস্টাইন কর্মসূচির সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবে ...